"৩ মিলিয়ন গ্রাহক সংখ্যার মাইলফলক ছুঁতে যাচ্ছে টেলিটক: অগ্রযাত্রা ঠেকাতে মরিয়া অন্য অপারেটররা!"
খুব শীঘ্রই ৩ মিলিয়ন বা ৩০ লাখ গ্রাহক সংখ্যার মাইলফলক স্পর্শ করতে
যাচ্ছে একমাত্র দেশীয় মোবাইল অপারেটর টেলিটক। বর্তমান গ্রাহক সংখ্যা আর
গ্রাহক প্রবৃদ্ধির হার বিবেচনা করে দেখা যাচ্ছে, ৩০ লক্ষ গ্রাহক ছাড়িয়ে
যেতে আর খুব বেশি বাকি নেই এই অপারেটরটির।
বাংলাদেশে সবার প্রথমে
থ্রিজি চালু, সন্তোষজনক গতি কিন্তু কম খরচ, পূর্বের তুলনায় নেটওয়ার্ক
কাভারেজ বৃদ্ধি ইত্যাদি এই গ্রাহক সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধির অন্যতম কারণ
বলে মনে করা হচ্ছে।
তবে পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, শুধু
বেশি সুবিধাই নয়; বরং অন্য অপারেটরদের স্বেচ্ছাচারিতা, অতি মুনাফা লোভের
মানসিকতা আর প্রতারণার মুখোশ উন্মোচন হয়ে পড়ায় ক্ষুদ্ধ হয়া গ্রাহক,
বিশেষ করে তরুন প্রজন্মের অনেক গ্রাহক এখন টেলিটক কেই শেষ ভরসা হিসেবে বেছে
নিচ্ছেন। এছাড়া অনলাইন মিডিয়া, সোশ্যাল নেটওয়ার্কেও স্বদেশী সিম এবং
পণ্য ব্যবহারে উদ্দুদ্ধ করছে বেশ কিছু গোষ্ঠী, এতে সাড়াও মিলছে বেশ। এটিও
টেলিটকের অগ্রযাত্রায় অন্যতম ভুমিকা পালন করছে।
সর্বশেষ গত
ডিসেম্বর, ২০১৩ তে বিটিআরসির হিসেবে টেলিটকের সক্রিয় গ্রাহক দেখানো হয়েছে
২৮ লাখ ২২ হাজার। আর জানুয়ারি, ২০১৪ এর শেষে এসে এই সংখ্যা প্রায় ২৯
লাখে এসে দাঁড়িয়েছে।
এদিকে টেলিটকের এই অগ্রযাত্রায় রীতিমত
গাত্রদাহ শুরু হয়েছে দেশের ৫টি বেসরকারী অপারেটরের। সুস্থ প্রতিযোগীতায়
বেশি সুবিধা করতে না পেরে এবার ভিন্ন পথ বেছে নিয়েছে তারা। এর মধ্যে বিশেষ
দুটি অপারেটর তাদের নেটওয়ার্কে টেলিটক থেকে কল আসা প্রায় বন্ধই করে
ফেলেছে।
বেশ কিছু টেলিটক গ্রাহক প্রমাণ সহ অভিযোগ করেছেন, দেশের
বেশ কিছু জেলায় বিশেষ করে যেখানে টেলিটক থ্রিজি চালু হয়েছে; এমন এলাকায়
ওই বিশেষ দুটি অপারেটরে কল যাচ্ছে না বললেই চলে। অথচ অন্য যেকোন নাম্বারে
কল যাওয়া-আসা পুরোপুরি স্বাভাবিক। বিষয়টি গ্রাহকরা নিজেই বুঝতে পেরে
অনেকে সেই অপারেটরদের কাছে গিয়ে এমন তৎপরতার তীব্র প্রতিবাদ জানান।
মজার ব্যাপার হল, ওই সব অপারেটরের কাস্টমার কেয়ার প্রতিনিধি এই অভিযোগ
স্বীকার করেননি, আবার নাকচ করেও দেননি। বরং দুই একজন নাম প্রকাশ না করার
শর্তে তাদের এই গোপন অপতৎপরতার কথা স্বীকারও করেছেন।
এই বিষয়ে
জানতে চাইলে টেলিটকের প্রডাক্ট ন ব্রান্ড ডেভেলাপার জনাব হাসনাইন চৌধুরী
তাঁর হতাশা জানিয়ে বলেন, 'এমন অভিযোগ সম্পর্কে আমরাও জানতে পেরেছি, কিন্তু
গ্রাহকদের জন্য কিছু করতেও পারছি না। কারণ এটি টেলিটকের কোন সমস্যা নয়।
টেলিটকের সমস্যা থাকলে কোন অপারেটরেই কল যেত না। বর্তমানে টেলিটকের গ্রাহক
সক্ষমতা আর সুইচিং ক্যাপাসিটি প্রায় ১ কোটিতে দাঁড়িয়েছে, তাই এখন তো
নয়ই বরং অদুর ভবিষ্যতেও টেলিটকের ওভারলোড সমস্যা হবে না। আর এই অন্যায়
কর্মকান্ড নাকের ডগার উপর দিয়ে ঘটলেও কোন প্রমাণের সুযোগ না থাকায় আইনগত
কোন ব্যবস্থাও নেয়া যাচ্ছে না। তবে মন্ত্রনালয়ে অভিযোগ করে নবনিযুক্ত
মাননীয় মন্ত্রী এই ব্যাপারে কোন ভুমিকা রাখতে পারেন কিনা সেটা খতিয়ে দেখা
হচ্ছে'।
খোজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা আর তার আশেপাশে টেলিটক
কর্তৃপক্ষের নজরদারী বেশি থাকায় তারা এই নেটওয়ার্ক সমস্যার মাধ্যমে
গ্রাহকদের টেলিটকের প্রতি ক্ষিপ্ত করার কাজটি করছে দুরের জেলাগুলোতে। বিশেষ
করে খুলনা আর উত্তরবঙ্গ থেকে বেশী অভিযোগ এসেছে।
কে এই দুই
অপারেটর: 'বহুদুর চলা' র স্লোগানে থ্রিজি তে যাত্রা শুরু করা এই অপারেটর
প্রথমেই সমালোচিত হয় তাদের উচ্চমুল্য আর এলিট এলাকায় থ্রিজি চালুর
ঢাক-ঢোলের প্রচারণার কারণে। যেখানে তাদের টুজির উচ্চমুল্যেই গ্রাহক অতিষ্ঠ,
সেখানে এই মুল্যকে বেঞ্চমার্ক ধরে তারা থ্রিজি মুল্য নির্ধারণ করে আরো
৫০%-২০০% বেশি দামে। এছাড়া তাদের ৮ জিবির আনলিমিটেড (!) নামের প্রহসন
ক্ষুদ্ধ করে তোলে সকল গ্রাহককে।
টেলিটকের কল অটো-ড্রপ করার
নেতৃত্বে আছে এই অপারেটরটি। এছাড়াও প্রথমে যুক্ত না থাকলেও পরে একই ধারা
অনুসরণ করে প্রতিবেশী একটি রাষ্ট্রের মালিকানাধীন অপারেটর, যাদের এদেশে
যাত্রা থেকে শুরু করে কর-ফাকি, গোপন টেলি-ট্রানজিট সহ আরো নানা গুরুতর
অভিযোগ রয়েছে।
বলা বাহুল্য, অন্য অপারেটরদের থ্রিজির প্রকৃত দশা
দেখে মোহভঙ্গ হয় গ্রাহকদের, টেলিটকের থ্রিজি গ্রাহক বৃদ্ধি বাড়তে থাকে
হু হু করে। অনেকেই সোশ্যাল নেটওয়ার্কে টেলিটকের প্রশংসা আর অন্য
অপারেটরদের দের বর্জনের আহবান জানাতে থাকেন। এই বিষয়টি নিয়ে 'অন্যদের
প্রতি ক্ষুদ্ধতা, টেলিটকের প্রতি ভালোবাসা!' শীর্ষক প্রতিবেদনও প্রকাশিত
হয় বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে।
0 মন্তব্য(গুলি):
Post a Comment